লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি পদের নিয়োগের পরীক্ষা বাতিল করেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। তবে অধিদপ্তরের জারি করা এই নোটিশের কাযকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ফলে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগের ফলাফল প্রকাশে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবীরা।
এ সংক্রান্ত পৃথক রিটের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।
এর আগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি পদের নিয়োগের পরীক্ষা বাতিল কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ (ডিজি)সংশ্লিষ্ট চার জনকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (২২ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালত আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যেতির্ময় বড়ুয়া। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কন্তি রায়।
রিটকারীদের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, ২০২০ সালের মার্চ মাসে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে ১ হাজার ৮০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। বিজ্ঞপ্তির ৩ বছর পর গত বছরের মে মাসে লিখিত পরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণ ৭ হাজার ৬২১ জন পরীক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু এর সাত মাস পর গত ১৪ জানুয়ারি সব পরীক্ষা বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে নতুন করে আবার পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এতে বলা হয় লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে নতুন করে আবার পরীক্ষা নেওয়া হবে। সাড়ে ৩ বছর অপেক্ষার পর নিয়োগের জন্য সবাই যখন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় তখন পরীক্ষা বাতিলের এমন সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ হন পরীক্ষার্থীরা। প্রতিকার পেতে উচ্চ আদালতে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন তারা। আজ সেই রিটের শুনানি শেষে রুল দেন আদালত।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার জ্যেতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ২০২০ সালের ১০ মার্চ প্রকাশিত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (প্রশিক্ষণার্থী) মনোনয়ন বিজ্ঞপ্তির আলোকে আবেদকারীদের লিখিত পরীক্ষা ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করা হয়েছে। এর পর ২০২৩ সালের ১১ মে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর পরে এসে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ও অতিরিক্ত সচিব এএইচএম লোকমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ১০৮০ পদে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নিয়োগের প্রার্থী মনোনয়ন বাতিল করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২০ সালের ১০ মার্চ প্রকাশিত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (প্রশিক্ষণার্থী) মনোনয়ন বিজ্ঞপ্তির আলোকে আবেদকারীদের লিখিত পরীক্ষা ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করা হয়েছে। এর পর ২০২৩ সালের ১১ মে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যেতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এর পর ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। রিটে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ওই রিটের শুনানি নিয়ে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে ৭৬২১ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার পরও পরীক্ষা বাতিলের বিজ্ঞপ্তি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
তথ্যসূত্র : দা ডেইলি ক্যাম্পাস