প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সব দলেরই প্রতিশ্রুতি থাকে আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার। সরকার গঠনের পর কিছু ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন হলেও কর্মসংস্থানের ঘাটতি থেকেই যায়। নিয়োগ দেওয়া হয় না নির্ধারিত সকল পদে। বহুল কাঙ্ক্ষিত এসব সরকারি চাকরিতে পদ খালি থাকায় ভুক্তভোগী হচ্ছেন লাখ লাখ চাকরি প্রত্যাশী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি চাকরিতে বিগত ১০ বছরে শূন্য পদের সংখ্যা কখনো ৪ লাখ ছাড়ায়নি, যা বর্তমানে রেকর্ড ৫ লাখের বেশি।
তথ্য বলছে, বেসামরিক প্রশাসনের ১৯ লাখ পদের এক চতুর্থাংশেরও বেশি (২৬ শতাংশ) এখন শূন্য রয়েছে। অর্থাৎ সরকারি চাকরির প্রতি ১০০টি পদের বিপরীতে ২৬টি পদ খালি পড়ে আছে। এ জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে কর্তৃপক্ষের অনীহাকে কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২২ সালে মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারি অফিসে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল রেকর্ড ৫ লাখ ৩ হাজার ৩৩৩টি (২৬ শতাংশ), ২০২১ সালে ছিল ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি (১৮ শতাংশ), ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি (২০ শতাংশ), ২০১৯ সালে ছিল ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি (২১ শতাংশ) এবং ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে পদ খালি ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি (২২ শতাংশ)— জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান
২০২২ সালে মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারি অফিসে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল সব থেকে বেশি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি অফিসে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রেকর্ড ৫ লাখ ৩ হাজার ৩৩৩টি (২৬ শতাংশ) শূন্যপদ ছিল।
সংশ্লিষ্টর বলছেন, এত সংখ্যক পদ খালি পড়ে থাকা সরকারি পরিষেবা পেতে ঝামেলা ও বিলম্বের মুখোমুখি হওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া এত বেশি শূন্যপদ থাকায় দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেকার শিক্ষিতরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানা যায়, ২০২১ সালে দেশের সরকারি চাকরিতে শূন্যপদ ছিল ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি (১৮ শতাংশ), ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি (২০ শতাংশ), ২০১৯ সালে ছিল ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি (২১ শতাংশ) এবং ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে পদ খালি পড়েছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি (২২ শতাংশ)।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ সব থেকে বেশি, যা প্রায় ৭৭ শতাংশ (১৩.৪৩ লাখ)। এর মধ্যে পদ খালি পড়ে আছে ৪ লাখ ৪১ হাজারের মতো। এতে আরও বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ৯ হাজার ১৩২টি শূন্যপদ রয়েছে যা মোট পদের প্রায় অর্ধেক। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ৭৪ হাজার ৫৭৪টি শূন্যপদ রয়েছে এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে ৪৪ হাজার ৭৯০টি শূন্যপদ।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড ১৯-এর বিধি-নিষেধ বিলম্বের অন্যতম কারণ। যার ফলে এ ধরনের নজিরবিহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর উদ্যোগের অভাবের কারণেও নিয়োগের গতি বাড়ছে না বলেও মত তাদের।
তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শূন্য পদে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি সমস্ত মন্ত্রক এবং বিভাগকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে বিজ্ঞপ্তি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ২০১৯-২০২৩ সাল মেয়াদে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ২৩৭টি পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। গত ৫ বছরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০ হাজার ২৬৪ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে শূন্যপদ পূরণে ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, ‘সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পদক্ষেপ নেবে। শিগগিরিই কিছু অগ্রগতি দেখা যাবে।’
তথ্যসূত্র : দা ডেইলি ক্যাম্পাস